শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন

রাসেলের মুক্তির দাবিতে শাহবাগে ইভ্যালির গ্রাহক-মার্চেন্টদের বিক্ষোভ

রিপোটারের নাম
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

দি বাংলা খবর ::ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলর মুক্তির দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ করেছে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক, পাইকারি বিক্রেতা ও কর্মীরা।

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টার পর থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে তারা জমায়েত হতে শুরু করেন। এরপর ব্যানার নিয়ে শাহবাগ মোড়ে ও পরে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন তারা। তাদের দাবি, রাসেলকে আটক রেখে এর কোনো সমাধান হবে না। বরং তারা তাকে সুযোগ দিতে চান। রাসেল যে ৬ মাসের সময় চেয়েছে সে সময় তারা দিতে রাজি আছে। অন্যথায় গ্রাহকের টাকার নিশ্চয়তা সকারকে দিতে হবে।

রাসেলের মুক্তির দাবিতে শাহবাগে আসা আবির নামে একজন গ্রাহক বলেন, আমি অর্ধেকের বেশি অর্ডার ডেলিভারি পেয়েছি। বাকি অর্ডারগুলো পেন্ডিংয়ে আছে। এখনও কিছু কিছু পাচ্ছি। এখনতো কিছুই পাব না ।

এই গ্রাহক বলেন, ইভ্যালির সঙ্গে অনেকদিন হলো ব্যবসা করছি। এতে আমরা অনেক খুশি। তবে অনেকের অর্ডার ও টাকা-পয়সা পেন্ডিং রয়েছে এটাও ঠিক।

মুনিয়া নামে আরেকজন বলেন, আমার বন্ধুরা যাদের চাকরি ছিলনা তারা অনেকেই ইভ্যালির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে। আবার অনেকে টাকা বা পণ্য পায়নি। এখন রাসেলের জেল হলে, আমাদের টাকাটা কে দেবে?

এসময় বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে একটি চক্রান্ত হচ্ছে; কোন গ্রাহক রাসেলের গ্রেফতার চায়নি। মাত্র একজনের ৩ লাখ টাকার জন্য লাখ লাখ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেনা । এছাড়া আমরা অনেকেই ইভ্যালির অফিসে গিয়েছি, আমাদের সাথে সবাই ভাল আচরণ করেছে, সময় চেয়েছে, কখনো খারাপ আচরণ করেনি বরং আমরা গালিগালাজ করেছি।

বিক্ষোভ থেকে ইভ্যালির গ্রাহকরা রাসেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। এ সময় তাদের হাতে সেইভ ইভ্যালি, সেইভ ই-কমার্স, আই সাপোর্ট ইভ্যালি, সেইভ রাসেল ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

তারা এক দফা এক দাবি, রাসেল ভাইয়ের মুক্তি; রাসেল ভাইয়ের স্বপ্ন বৃথা যেতে দিব না; বাংলাদেশের ই-কমার্স, ধ্বংস হতে দেব না; ষড়যন্ত্রের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ‘ইভ্যালি সেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ সাধারণ সম্পাদক শাহ এমদাদুল্লাহ বলেন, ইভ্যালিকে বন্ধ না করে নিয়মের মধ্যে এনে এটিকে চালু রাখতে হবে। তাহলে কম হোক বেশি হোক আমরা টাকা পাব । আমাদের ব্যবসা চলমান থাকলে আমরা সেখান থেকেও লাভ করতে পারব। তার দাবি, একটি নীতিমালার আলোকে ইভ্যালিকে ব্যবসার সুযোগ দিতে হবে। যাতে তারা অতিরিক্ত অফার না দেয়, গ্রাহকের অধিকার নিশ্চিত হয় এব্যাপারে তাদের মনিটরিংয়ে রাখতে হবে। এখন এর প্রধান কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হলে প্রতিষ্ঠানটি চলবে কিভাবে । তাকে জেল দিয়েতো লাভ নেই বরং আমাদের টাকার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ব্যবসা চালু থাকলে আমরা সবাই এটিকে পুষিয়ে নিতে পারব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইভ্যালির একজন কর্মী বলেন, ইভ্যালির এখন অনেক গ্রাহক ছাড় না দিলেও তারা ইভ্যালি থেকে পণ্য কিনছে । আমাদের  ব্রান্ডিংয়ের কাজ হয়ে গেছে । যখন আমরা লাভ করতে যাচ্ছিলাম তখনই আমাদের বাধা দেওয়া হল। মূলত এখানে বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

ইভ্যালির এমডিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, রাসেল কোন টাকা বিদেশে পাচার করেনি। সে পালিয়েও যায়নি। সে তার পাসপোর্ট জমা দিতে রাজি ছিল। সে শুধু সময় চেয়েছে তাকে সেটা দেওয়া হচ্ছে না । দারাজ ফুড পান্ডাসহ অনেক ই-কমার্স লোকসানে আছে তাহলে ইভ্যালিকে নিয়ে কেন এত মাথা ব্যাথা। আমরা গ্রাহকদের কাছে সময় চেয়েছি । তারাও আমাদের সময় দিতে রাজি আছে। আমারা ডেলিভারি দিয়ে যাচ্ছি। করোনার কারণে সব ব্যবসায়ীরাই লোকসান দিয়েছে, যোগ করেন তিনি। অভিলম্বে রাসেল ও তার স্ত্রীর মুক্তি দাবি করেন ইভ্যালির এই কর্মী।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে আরিফ বাকের নামে এক ভুক্তভোগী গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখিত আবেদন জমা দেন। অভিযোগে বলা হয়, ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আরিফ বাকের ও তার কয়েকজন বন্ধু চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। সব পণ্যের জন্য নির্ধারিত টাকাও পরিশোধ করেন তারা। তবে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করার কথা থাকলেও দিনের পর দিন পার হয়ে গেলেও পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি ইভ্যালি। পরবর্তীতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে পণ্যে চাইতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ভুক্তভোগীকে পণ্য বুঝিয়ে না দিয়ে বরং ভয়ভীতি দেখান।

পরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এরপর ওইদিন বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে তাদের মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ