দি বাংলা খবর ডেস্ক ::প্রখ্যাত আলেম আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুতে নেতৃত্ব সঙ্কট সৃষ্টির শঙ্কা ছিল হেফাজতে ইসলামের। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই সংগঠনের আমির ছিলেন। তবে জানাজার সময় তারই মামা ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে সংগঠনটির আমির ঘোষণা করা হয়। এতে নেতৃত্ব সঙ্কটের শঙ্কা কেটে গেলেও বড় সঙ্কট তৈরি হয় দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনায়। মাদ্রাসার প্রধান শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিবের দায়িত্বেও ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। যেটা পূরণ হয়নি এখনও। আর এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
শূরা সদস্যদের মতে, দেশের কওমি অঙ্গনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে ৩৪ বছর ধরে ছিলেন আল্লামা আহমদ শফী। পাশাপাশি মাদ্রাসাটির নায়েবে মোহতামিম ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। শফী-পরবর্তী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন তিনি। বছরখানেক আগে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন আল্লামা শফি। এরপর তার মৃত্যু হয়। সেই থেকে মাদ্রাসাটির মহাপরিচালক পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে অদৃশ্যভাবে এই গুরুদায়িত্ব পালন করেন জুনায়েদ বাবুনগরী। যদিও শিক্ষকদের তিন সদস্যের একটি কমিটি ছিল মাদ্রাসা পরিচালনায়।
এরই মধ্যে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় কওমিপন্থি অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির আমির ছিলেন আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হেফাজত দেশের ধর্মীয়সহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে।
২০১৩ সালে এসে ইসলাম ও রাসূলকে (সা.) কটূক্তিকারীদের ফাঁসি চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। ওই বছর ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে ৫ মে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে। ওই সময় রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ৬ মে গ্রেফতার হন জুনায়েদ বাবুনগরী। পরে আহমদ শফীর সঙ্গে সমঝোতা করে কৌশলে তাদের আন্দোলন থামায় সরকার।
এ ঘটনার পর থেকে আহমদ শফী ও বাবুনগরীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব মাদ্রাসার বিভিন্ন ইস্যুতেও প্রভাব ফেলে। বাবাকে দিয়ে কৌশলে ২০২০ সালের ১৭ জুন এক বৈঠকের মাধ্যমে বাবুনগরীকে মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয় শফীর ছেলে আনাস মাদানি। তার স্থলে নিয়োগ দেওয়া হয় শেখ আহমদকে। এরপর থেকে সংকট আরও ঘনীভূত হতে থাকে।
একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে ছাত্রবিক্ষোভ শুরু হয়। মাদ্রাসায় চলে ব্যাপক ভাঙচুর। এর একদিন পর শফী নিজে মহাপরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন। ছেলে আনাস মাদানিকেও সহকারী পরিচালক (শিক্ষা) থেকে বাদ দেন। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আল্লামা শফীর।
এরপর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার দৃশ্যপট আবার পাল্টাতে শুরু করে। তার দাফনের দিন হাটহাজারী মাদ্রাসায় শূরা বৈঠক বসে। বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে শিক্ষা সচিব ও প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে অদৃশ্যভাবে বাবুনগরীই মাদ্রাসার পরিচালনাসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করতেন। যে কারণে মহাপরিচালক পদে কেউ না থাকলেও শূন্যতা অনুভব করেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, গত ১৯ আগস্ট মারা যান জুনায়েদ বাবুনগরী। এর মধ্য দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনায় আবার নতুন সংকট দেখা দেয়, যা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি।
এ বিষয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটির সদস্য ও ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী বলেন, জুনায়েদ বাবুনগরী একসময় মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক ছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি পরিচালনার কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। শুধু প্রধান শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। সুতরাং তার মৃত্যুতে পরিচালনা পরিষদের কোনো পদ খালি হয়নি। বাবুনগরীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পদে নিয়োগ হতে পারে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে মাসখানেকের মধ্যে শূরা বৈঠক হতে পারে। বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে মাদ্রাসায় নতুন মহাপরিচালক দেওয়া হবে নাকি আগের তিন সদস্য দিয়ে পরিচালিত হবে। শূরা বৈঠক যেটি ভালো মনে করবে সেটিই সিদ্ধান্ত নেবে। |