শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন

সাংবাদিককে ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেটকে গুরুদণ্ড, ডিসিকে লঘু

রিপোটারের নাম
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১

 

দি বাংলা খবর :: মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিককে সাজা দেওয়া ও ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন কুড়িগ্রামের সেই জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) প্রশাসনের চার কর্মকর্তা। তবে যে দুজনের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল, তাদের তুলনামূলক কম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ কম ছিল, তিনি পেতে যাচ্ছেন গুরুদণ্ড।

শাস্তি পাওয়া তৎকালীন সেই ডিসির নাম হলো সুলতানা পারভীন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করা সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা।

গত বছরের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে ধরে এনে সাজা দেওয়ার ঘটনায়র এই কর্মকর্তারা শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন। ওই রাতে আরিফুল ইসলামকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন দাবি করা হয়েছিল, ‘মাদকবিরোধী অভিযানে’ আরিফুলের কাছ থেকে আধা বোতল মদ ও ১৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

সাংবাদিক আরিফুল দাবি করেছিলেন, তাকে সাজা দেওয়া ও নির্যাতনের কারণ তৎকালীন জেলা প্রশাসনের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা। ঘটনার পরপরই কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন এবং দুই সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত ও শুনানি করে তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীনকে লঘুদণ্ড হিসেবে দুই বছর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিনের ক্ষেত্রে পদাবনতির সুপারিশ করা হয়েছে। আর এনডিসি এস এম রাহাতুল ইসলাম তিন বছর বেতন বৃদ্ধির সুবিধা হারাবেন। সবচেয়ে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে সেই রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করা সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমার ক্ষেত্রে। তাকে চাকরিচ্যুত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে নথি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়। সেই প্রক্রিয়াটি এখন চলমান। রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে এসব ক্ষেত্রে সাধারণত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ীই শাস্তি হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনসহ কিছু প্রক্রিয়া শেষ হলেই শাস্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। রাষ্ট্রপতি চাইলে দণ্ড কমাতে বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্তে উঠে এসেছে, সেদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে প্রচলিত বিধিবিধান মানা হয়নি।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম বলেন, তাকে নির্যাতন করার ঘটনায় মূল দায়ী ব্যক্তি সুলতানা পারভীন ও নাজিম উদ্দিন। তাদের নামমাত্র শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। রিন্টু বিকাশ চাকমাকে বানানো হচ্ছে ‘বলির পাঁঠা’। তিনি বলেন, তার জানামতে ঘটনার রাতে রিন্টু বিকাশ চাকমা দৃশ্যমান কোনো অপরাধ করেননি, শুধু বিচারিক নথিতে সই করেছিলেন। সব নির্দেশনা দিয়েছিলেন নাজিম উদ্দিন এবং তার কথায় স্পষ্ট ছিল যে ডিসির নির্দেশে এসব করছেন। আরিফুল আরও উল্লেখ করেন, এই ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করেছেন। আশা করছেন আদালতেই ন্যায়বিচার পাবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ