শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন

স্বাস্থ্যবিধি এখন শুধুই মাস্কই 

রিপোটারের নাম
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

দি বাংলা খবর ডেস্ক :: বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে বাংলাদেশেও দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু বেড়েছে কয়েক গুণ। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই আজ রবিবার (১ আগস্ট) থেকে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। ঈদের পর যেসব পোশাককর্মী গ্রামে অবস্থান করছিলেন এমন খবরে তারা এরই মধ্যে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পিকআপ, ট্রাক ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও রিকশায় বাড়ি থেকে রওয়া হয়েছেন। ঢাকামুখী মানুষের স্রোতে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না।

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জনচলাচল বাড়ায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীর আশঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, লকডাউন স্থায়ী সমাধান না। করোনা কবে যাবে তা কেউ বলতে পারে না। টিকা গ্রহীতারাও নিরাপদ নয়। টিকা নেওয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরাই শেষ ভরসা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করা সম্ভব। একই সঙ্গে নিবন্ধন উঠিয়ে দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার টিকা দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার পরিপ্রেক্ষিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লে চিকিৎসাসেবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এখনই সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই। বর্তমানে যেভাবে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে প্রচণ্ড মানসিক চাপে রয়েছেন ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা। লাশ আর রোগী দেখতে দেখতে ক্লান্ত তারা।

হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা বলেন, এত রোগীর চাপ সহ্য করতে পারছি না। মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে ১৭৫ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধেও এত জন চিকিৎসক মারা যাননি। বিএমএর তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতাযুদ্ধে শহিদ হন ৮৭ জন চিকিৎসক।

বর্তমানে করোনায় আক্রান্তদের সিংহভাগই গ্রামের মানুষ। করোনায় আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই গ্রামের মানুষ। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ৮০ শতাংশই গ্রাম থেকে এসেছেন। সেই গ্রামের মানুষ এখন ছুটছেন রাজধানীর দিকে। চিকিৎসকরা বলেন, চলমান লকডাউন এক সপ্তাহের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু হ্রাসের কোনো লক্ষণ নেই। গত কয়েক দিন ধরে দেশে গড়ে দুই শতাধিক করোনা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এর ওপর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষের চলাচল বেড়েছে।

করোনা ভাইরাস: ব্যবহৃত মাস্ক-গ্লাভস যত্রতত্র ফেলে যে ক্ষতি করছেন - BBC News  বাংলা

ছবি: সংগৃহীত

মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সবকিছু করা যাবে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে মহাবিপদ। আমাদেরও জীবন আছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালে রোগী ধারণক্ষমতা সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু পরামর্শ দিতে পারে। তবে তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্বশীল হতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখা, মানুষের জীবিকানির্বাহসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে।

তবে এসব কারখানায় যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। টিকা গ্রহণে মানুষকে উত্সাহিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মাস্ক পরতেই হবে। আর এসব কাজে সামনের সারিতে রাখতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। আর পেছনে থাকবে প্রশাসন। তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হবে। নইলে সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। তখন ‘ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই’-এর মতো অবস্থা হবে চিকিৎসাসেবার। এখন হাসপাতালে জনবল সংকট, অক্সিজেনের সংকট। কোথাও আইসিইউ খালি নেই। চোখের সামনে রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে, এটা দেখা চিকিৎসক হিসেবে আমাদের কাছে অনেক কষ্টের। ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ লকডাউন না দিয়ে শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমরা কেন পারব না? রাজধানী থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের সামনে রেখে করোনা নির্মূল কমিটি গঠন করতে হবে। শুধু প্রশাসন দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। প্রশাসন জেল-জরিমানা করেও মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারছে না। একমাত্র জনপ্রতিনিধিই পারে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে।

করোনা ভাইরাস: বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত আরও ৩,৮৬৮  - BBC News বাংলা

ছবি: সংগৃহীত

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, মাস্ক পরাসহ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর থেকে কঠোরতর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে হবে। পাড়া-মহল্লায় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে করোনা নির্মূল কমিটি করতে হবে। গ্রামের টিকা প্রদানের হার বাড়াতে হবে। কলকারখানার শ্রমিকরা যাতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সব কিছু করা সম্ভব। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যেভাবে শ্রমিকরা ঢাকায় আসছে তাতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ৫ আগস্টের পর লকডাউনের কী হবে সভা করে সেটি শিগিগরই জানিয়ে দেবে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, লকডাউন স্থায়ী সমাধান না। লকডাউন সীমিত সময়ের জন্য। অর্থনীতির চাকা সচল রেখে জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য সরকার কলকারখানা খুলে দিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করা গেলে সবকিছু করা সম্ভব। আর এ কাজগুলো করতে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখা, বিদেশে গার্মেন্টসের বাজার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রক্ষা করা, মানুষের জীবিকাসহ সবকিছু বিবেচনা করে কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার হার কম। তবে এখন সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, মাস্ক পরে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু গ্রাম থেকে মানুষ ঢাকায় আসছে, তারা ঢাকার মানুষকে সংক্রমিত করবে। তাই তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা ছাড়া সম্ভব না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কেউ রোগী হবেন না। এখনই হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ টিকা দিতে প্রস্তুত | UNICEF বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে লকডাউন খুলে দেওয়া হচ্ছে, অথচ হাসপাতালে কোনো বেড খালি নেই। লকডাউন দিয়ে লাভ হচ্ছে না। এখন স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা ও ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ