সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ১০:৫৬ অপরাহ্ন

সংসার ও নিজের পেটের জ্বালাই  জীবন-জীবিকার সংকটে মানুষ

রিপোটারের নাম
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

দি বাংলা খবর ::করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় জীবন-জীবিকা নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া মানুষদেরও এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা। কর্মসংস্থান হারিয়ে গত বছর যারা শহর ছেড়েছিল তারা আবার ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা তাদের নতুন সংকটে ফেলেছে।

এমনিতেই কাজ হারিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা, তার ওপর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি শুধু শহর নয়, গ্রামীণ এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে গ্রামীণ এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার এখন ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে গত আট মাসের মধ্যে জুনে দেশে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য করা গেছে।

করোনা শুরুর আগে বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় প্রায় ৭৪ শতাংশ অর্থ নিজ পকেট থেকে ব্যয় করত। সরকারিভাবে হাসপাতালগুলোতে যে খরচ করা হয় সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সেটি স্পস্ট। করোনার এই সময়ে বাড়তি ব্যয় যোগ হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় বহু পরিবার তছনছ হয়ে যাওয়ার খবর এখন নিত্যদিনের।

করোনার দীর্ঘায়িত প্রভাবে ক্রমেই নিঃস্ব হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। আয় কমে যাচ্ছে। জীবন রক্ষার তাগিদে জীবিকা হারাচ্ছে তারা। দারিদ্রসীমার নিচে নেমে অনেকের দুই বেলা খেয়ে পরে থাকাই কষ্টকর হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। আর ক্রয়ক্ষমতা কমলে সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে শুধু উৎপাদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এখন সাধারণ মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, লকডাউন নয়, যত দ্রুত সম্ভব দেশের মানুষদের ভ্যাক্সিনের আওতায় আনাটাই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ ধরনের লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের আগে মানুষের জীবিকা নিয়ে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল সেটি করা হয়নি। যতদিন করোনা থাকবে ততদিন দেশে বিনিয়োগ হবে না এটা ধরে নেওয়া যায়। তাই কর্মসংস্থান তৈরি করাও কঠিন। এজন্য আমরা বলেছিলাম, দরিদ্রদের সরাসরি সহায়তা দিতে। এবারের বাজেটে অন্তত ১ কোটি পরিবারকে সহায়তার জন্য বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল, সেটি করা হয়নি। দেশের ১ কোটি পরিবারকে যদি ২ হাজার টাকা করে মাসে দেওয়া হয়, তাতে এক বছরে সরকারের মাত্র ২৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই টাকা বরাদ্দ রাখতে সরকারের বাজেট ঘাটতি মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেত, যা বড় কিছু নয়।

তিনি আরও বলেন, করোনার প্রভাবে যারা নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে তাদের সহায়তা করা না হলে এর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে পড়বে। গত বছর করোনার প্রকোপ শুরুর পর দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রদের সহায়তা করতে দেখা গেছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব দরিদ্রদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ