মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০১:৪৯ অপরাহ্ন

দাবীর মুখে গার্মেন্টস খোলা হলেও শ্রমিক আসার কোন যানবাহনের ব্যবস্থা নেই

রিপোটারের নাম
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

দি বাংলা খবর ::ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে শুরু হওয়া বিধিনিষেধের মধ্যেই রোববার থেকে খুলছে কলকারখানা। যদিও বিধিনিষেধে অনেক শ্রমিকেরা দূর দূরান্তে রয়েছে। এর মধ্যে কিভাবে তারা কর্মস্থলে ফিরবেন? তার জন্য কোন পদক্ষেপও নেয়া হয়নি।

তবে মালিক পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে সকল শ্রমিকেরা কারখানার আশেপাশে রয়েছেন তাদেরকে নিয়েই উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু গার্মেন্টস মালিকরা তাদের সেই কথা রাখেননি। বরং গার্মেন্টস খোলার ঘোষণার পরই শ্রমিকদেরকে মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে আগামীকাল অফিসে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রোধে এপ্রিলে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা উৎপাদন চালু ছিলো। গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত এবং ১ থেকে ১৪ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা চালু ছিল।

তবে গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শুরু হওয়া কঠোরতম বিধিনিষেধে সব ধরণের শিল্প-কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর থেকেই সরকারের সঙ্গে দেন দরবারের শুরু পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচ সংগঠনের নেতাদের। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দেন তারা। তারা বলেন, কারখানা বন্ধ থাকলে বিদেশে তার সকল অর্ডার বাতিল হয়ে যাবে।

এরপর গত বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল ব্যবসায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে যত দ্রুত সম্ভব শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানান তারা। পরে শুক্রবার রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।

কলকারখানা চালুর প্রসঙ্গে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, অনেক শ্রমিক ঈদে গ্রামে যায়নি। আবার অনেকে ফিরেও এসেছে। তাই আমরা কলকারখানার আশপাশে থাকা শ্রমিকদের নিয়েই উৎপাদন শুরু করতে চাই। আর ৭০ শতাংশ শ্রমিক কারখানার আশেপাশেই রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। পাশাপাশি গ্রামে যারা আছেন তাদের এখনই না আনতে সদস্য কারখানাগুলো যাতে চাপ না দেয় সেই নির্দেশনা দেয়া হবে।

এদিকে রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা খোলার খবরে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। তাদের বেশিরভাগই তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী। কিন্তু সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে ফিরতে তাদেরকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে শনিবার হাজার হাজার মানুষকে পার হতে দেখা গেছে। তারা যানবাহন পরিবর্তন করে এবং পণ্যবাহী যানের ছাদে করে কিংবা পায়ে হেঁটে তাদের ঢাকার পথে রওনা দিতে দেখা গেছে।

এসময় নুরী খাতুন নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ জার্নালের। তিনি বরিশাল থেকে এসেছেন। যাবেন গাজীপুরের মাওনা। নুরী জানান, ৫ আগস্ট পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে বলে আগে শুনেছিলাম। কিন্তু শুক্রবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, রোববার থেকেই কারখানা খুলবে। এই কথা আমাগো মোবাইলে ম্যাসেজে পাঠাইছে, যেন কালকে (রোববার) অফিসে হাজির থাকি। কি করবো এখন? প্যাটের দায়ে চাকরি বাঁচাতে হলে তো আমাগো আসতেই হইবো।

তিনি আরো জানান, সিএনজি ও অটোরিকশায় এবং কয়েকবার যানবাহন পরিবর্তন করে ও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত এসেছেন। তার সঙ্গে ব্যাগ বোচকা আছে, বাচ্চা-কাচ্চা আছে।

নুরী বলেন, গাজীপুরের মাওনা পর্যন্ত কিভাবে যাবো জানি না। কিন্তু যেতে তো হবে। নাইলে চাকরি থাকবে না। আর সরকারের উচিৎ ছিল কারখানা খুলে দিলে যানবাহনও চালু করে দেয়া।

তবে নুরী খাতুনের কথার সঙ্গে মালিক পক্ষের বক্তব্যে মিল পাওয়া যায়নি। কারণ মালিক পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, যে সকল শ্রমিক গ্রাম থেকে আসতে পারবেন না তাদের কারো চাকরি যাবে না। কিন্তু নুরী বলছেন, না এলে চাকরি থাকবে না।

অন্যদিকে পাটুরিয়া থেকে ঢাকামুখী সড়কেও একই চিত্র দেখা গেছে। গাবতলীতে নাহিদ নামে একজন গার্মেন্টস কর্মীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, এক তারিখ কারখানায় হাজির হতে হবে বলে মোবাইলে ম্যাসেজ আসছে। তাই অনেক কষ্ট করে ভাইঙ্গা-ভাইঙ্গা রাজবাড়ী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত আসছি।

কুমিল্লার চাঁদপুর থেকে আমিনবাজারে আসা সুলতান নামে আরেকজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, কালকে গার্মেন্টস খুলে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে আসতে হয়েছে। কিন্তু আসতে নানারকম বাহন ব্যবহার করে, কিছুটা হেঁটে হেঁটে চাঁদপুর থেকে এই পর্যন্ত এসেছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ