দি বাংলা খবর ডেস্ক ::স্কুল বন্ধ, কবে খোলবে জানি না। পেটের ক্ষিধায় পড়ালেহা ছাইড়া এ্যাহন বাদাম বেঁচি। ঘরে গেলে দেহি খাওন নাই। খালি অভাব আর অভাব। কেউ একবেলা খাইতে দেয় না। কেউ যদি খাওন পড়ন দিত, হেলে আর বাদাম বেঁচতে আইতাম না।’
এভাবেই সহজভাবে কথাগুলো বলছিল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পুরান মহিপুর এলাকার ৯ বছর বয়সের শিশু রবিউল ইসলাম।
বাবা শহিদ সিকদার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাত এবং পা দুটোতেই শক্তি কম পান। তিনি নিজেও একজন বাদাম বিক্রেতা। দুই ভাইবোনের মধ্যে রবিউলই বড়। রবিউল স্থানীয় মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। এ বয়সেই রবিউলকে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে। তার স্বপ্নগুলো দারিদ্র্যতায় মলিন হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে রবিউল জানায়, তার ছোট বোন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের কোনো জায়গা-জমি নাই। কুয়াকাটা থেকে পটুয়াখালী এবং বরিশালগামী বাসে বাদাম বিক্রি করে রবিউল। এই টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে। এখন লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় তেমন বিক্রিও নাই।
রবিউল জানান, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়শ’ টাকার বাদাম বিক্রি করে। তাতেতার দুইশ’ টাকা লাভ হয়। বাদাম বিক্রির টাকা বাবার কাছে জমা দেয় রবিউল। বাদামের সাথে ছোলা-বুট এবং মটোর ভাজাও বিক্রি করে সে। প্রতিটি প্যাকেটের দাম দশ টাকা করে।
রবিউলের বাবা শহিদ সিকদার বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী। তাই ছেলেকে ঠিকমতো পড়ালেখা করাইতে পারি না। ওর লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছে। কিন্তু একা বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন, যেন বাদাম বিক্রির পাশাপাশি ও পড়ালেখা করতে পারে।
মহিপুর ইউপি’র মেম্বর সিরাজুল ইসলাম বলেন, রবিউলকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তার বাবা একজন প্রতিবন্ধী। অভাবের কারণেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বাদাম বিক্রি করে রবিউল। আমি ইউপি সদস্য হওয়ার পর পরিষদ থেকে যতটা সম্ভব ওদের সহায়তা দিয়েছি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, রবিউলের বাবা শহিদ সিকদার সমাজসেবা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। পরবর্তীতে হুইল চেয়ারসহ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ আসলে তার জন্য ব্যাবস্থা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আগামী অর্থবছরে অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি বরাদ্দ আসলে রবিউলের জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হবে।