মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

করোনায় লকডাউনে   মধ্যবিত্তের  জীবনের গতি ‘লক’ করে দিয়েছে 

রিপোটারের নাম
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১

দি বাংলা খবর ::করোনাভাইরাসের প্রথম দফার ধাক্কা সামলাতে ধারদেনা করে ব্যবসাটা আবার শুরু করেছিলাম। অনেকটা গুছিয়েও এনেছিলাম। কিন্তু কাজকর্ম বন্ধ হয়ে পড়ায় মাথায় হাত পড়েছে। কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া-সব মিলিয়ে কঠিন এক সময়ের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। এমন অবস্থা-না পারি কাউকে বলতে, না পারি সইতে। লকডাউন জীবনের গতিটাকে একেবারে লক করে দিয়েছে’- কথাগুলো বলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সানোয়ার হোসেন। তবে শুধু সানোয়ার হোসেনই নন, লকডাউনে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের দুঃখ-কষ্টের ধরন অনেকটা একই রকম।

চলমান লকডাউনে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষই কিছু না কিছু দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে সবার সমস্যা একরকম নয়। করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। একরকম স্থবির হয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর এতে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাদের অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন, নয়তো কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বেতন। আবার কারও চাকরি আছে; কিন্তু বেতন নেই। স্বাভাবিক কাজকর্ম না থাকায় বড় একটি অংশের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বেতন কর্তন, কর্মী ছাঁটাই- প্রভৃতি কারণে বর্তমানে অনেকেই আয় হারিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন। পরিবারের আহারের পাশাপাশি বাড়িভাড়া নিয়েও রয়েছে দুশ্চিন্তা। সামাজিক মর্যাদার কারণে তারা কারও কাছে কিছু চাইতেও পারছেন না। ফলে নীরবেই কষ্ট সহ্য করছেন অনেকে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মধ্যবিত্ত যে পর্যায়ে আছে, তা হয়তো সহনীয়। কিন্তু অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে তারাই সবচেয়ে বিপদে পড়বেন। তাদের মতে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে। তবে বণ্টন ব্যবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া মধ্যবিত্তের কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। ফলে তাদের কাছে খাবার পৌঁছানো খুব কঠিন। তাদের মতে, নিুবিত্তরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশই অসহায়।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে। এ শ্রেণির মানুষকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।

অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যাদের দৈনিক আয় ১০ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে, তারাই মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে তাদের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে। তবে আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধাকেও মানদণ্ডে আনতে হবে। ওই বিবেচনায় বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা চার কোটির মতো। তবে এর উল্লেখযোগ্য অংশই নিুমধ্যবিত্ত। তারা ছোট বেসরকারি চাকরি, ছোট ব্যবসা এবং দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল। গতবারের লকডাউনে সরকারের পক্ষ থেকে নিুবিত্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। উচ্চবিত্তের জন্য ছিল শিল্পের প্রণোদনা। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীরা কিছুটা প্রণোদনা পেলেও অসহায় মধ্যবিত্তের জন্য মোটা দাগে তেমন কিছুই ছিল না। ফলে বলা যায়, এবারের লকডাউনও ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে এ শ্রেণির মানুষের ওপর। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রিপোর্টে বলা হয়, মহামারির প্রভাবে নিু মধ্যবিত্তের আয় ব্যাপকভাবে কমেছে। এতে এ শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেড় যুগ আগে গ্রাম থেকে শহরে এসে একটি প্রেসে কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন সানোয়ার হোসেন। বর্তমানে ৩৪ বছর বয়সি এ উদ্যোক্তা পুরান ঢাকায় নিজেই গড়েছেন ‘এসএমএস প্রিন্টিং প্রেস’। দুজন কর্মচারীর সঙ্গে তিনিও কারখানায় কাজ করেন। সানোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউনের শুরুতে ৪ মাস প্রেস বন্ধ ছিল। এরপর কয়েক মাস কাজের সুযোগ পেয়েছি। এরপর ফের বন্ধ। দুজন কর্মচারী, দোকান ভাড়া, ঘর ভাড়া, পরিবারের খরচ-সব মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটুখানি আলোর মুখ দেখতে না দেখতেই ফের চোখে অন্ধকার দেখছি। লকডাউন থাকলে ব্যবসায় উন্নতির কোনো উপায় নেই।

জানতে চাইলে বেসরকারি চাকরিজীবী শরীফ আহমেদ বলেন, লকডাউনে প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যাওয়ায় সব কর্মচারীর বেতনও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও একই অবস্থা। তাই এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে যাওয়ারও সুযোগ কম। অনেকটা বাধ্য হয়েই মুখ বুজে কাজ করে যাচ্ছি। মাস শেষ না হতেই বাড়িভাড়া, সংসার খরচ আর চালাতে পারছি না। আমাদের চাপা কান্না দেখার কেউ নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ