মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১২:৪৯ অপরাহ্ন

কঠোরতায়ও নানান বাহানা! পুলিশের সাথে ‘লুকোচুরি’ দোকানের সাটার বন্ধ, ভেতরে খোলা 

রিপোটারের নাম
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১

দি বাংলা খবর ডেস্ক ::কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই! অপেক্ষা করতে করতে মৃত্যু ঘটছে আক্রান্তদের। সারা দেশই এখন হটস্পট। ডেল্টা ধরনে পরিস্থিতি ভয়াবহ। চলছে রাজধানীসহ দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন। র‍্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও চেকপোস্টের কঠোরতাও অব্যাহত। তবুও মানুষের বাহানা। নানা অজুহাতে বের হচ্ছে। গতকালও দেশে করোনায় ২৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ১৯২ জন।  হার দাঁড়িয়েছে ২৯.৮২ শতাংশ। আরো ভয়াল পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেয়া হচ্ছে জীবনের গুরুত্ব। গার্মেন্টসহ অফিস আদালতও বন্ধের পক্ষে কঠোর অবস্থানে। এ পরিস্থিতিতে মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। অনেকে মানছেন না স্বাস্থ্যবিধিও। মাস্কও পরছেন না।

গতকাল চতুর্থদিন সোমবার রাজধানীতে দেখা গেছে বহু মানুষকে ধূমপান করতে, খাবার খেতে, পরিবার নিয়ে ঘুরতে। গলিতে বসে আড্ডাও দিচ্ছেন অনেকে। পুলিশ এলে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। যেন লকডাউনে পুলিশের সাথে ‘লুকোচুরি’ খেলা, দোকানের সাটার বন্ধ, ভেতরে লোকজন বসে খাচ্ছে। গতকাল দুপুরে হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সামনে ৪০-৪৫ বছরের এক লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধূমপান করছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে দূর থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, তিনি বাজার করতে এসেছেন। পরে তাকে  ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। সকাল থেকে শাহবাগ মোড়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে অনেকেই ফাঁকা ঢাকায় ঘুরতে বের হয়েছেন। অনেকেই দিতে পারেননি সঠিক জবাব। হাসপাতাল আর ওষুধের কথা বলেও অনেকে প্রমাণ দিতে না পারায় গুনতে হয়েছে জরিমানা। চেকপোস্টে যাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সবাই কোনো না কোনো কারণ দেখাচ্ছেন। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে সরকারও। শ্রমিক ভিড়ের ঝুঁকিও সরকার নিতে চাচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই এখন সরকারের বড় টার্গেট। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে দেশে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা এখন পর্যন্ত সরকারের নেই। ‘যেহেতু গার্মেন্ট ও রপ্তানিমুখী কলকারখানাগুলো বন্ধ রেখেছি, লাখ লাখ শ্রমিক আসা-যাওয়া করতো, সেগুলো কমেছে। এগুলো ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণ আছে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘জীবন আগে, অর্থনীতি পরে’। তিনি গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেল্টা ধরনের কারণে সারা দেশই এখন হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের কারণে রোগীর ফুসফুস দ্রুত আক্রান্ত হয় এবং বেশির ভাগ আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারলে সুস্থ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আক্রান্ত রোগীদের কেউ কেউ ফুসফুসের ৭০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর হাসপাতালে আসছেন। তখন আর কিছু করার থাকছে না। আর ডেল্টায় আক্রান্তদের অন্য ধরনগুলোর চেয়ে অক্সিজেন সাপোর্ট বেশি লাগছে। সারা দেশেই করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সীমাবদ্ধতার কারণে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী গত বছরের মতো অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছেন। ঢাকার বাইরের রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই দেশের হাসপাতালগুলোতে শয্যা সঙ্কট দেখা দেবে।’ সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালে জায়গাও হবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শহরের হাসপাতালে আসা ৭৫ শতাংশ রোগী গ্রামের। ঈদে যাওয়া-আসার কারণে সংক্রমণ পাঁচ থেকে ছয়গুণ বেড়ে গেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে করোনা মহামারিকালের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখন। সংক্রমণের ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে মানুষের চলাচল সীমিত করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। লকডাউনে সব ধরনের অফিস-আদালত থেকে শুরু করে শিল্প-কলকারখানাও বন্ধ রয়েছে। এতে অর্থনীতির ক্ষতি হলেও জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার।

এদিকে গতকাল রাজধানীর শাহবাগ, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে দেখা গেছে র্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, চেকপোস্ট কঠোরভাবে চলছে। তারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন। মানুষের অদ্ভুত অদ্ভুত কারণ ও বাহানা শুনতে পাচ্ছেন। অধিকাংশের কাছে প্রয়োজনীয় প্রমাণ নেই। আছে শুধু কারণ! গতকাল বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ে একটি মাইক্রোতে পরিবার নিয়ে চারজন বের হয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট জানতে চাইলে তারা বলেন, হাসপাতালে রোগী দেখতে যাচ্ছেন। পরে রোগীর নাম ও কোন হাসপাতালে রয়েছে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি প্রমাণসহ। এক পর্যায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন গাড়ি না থাকায় তারাও বিপদের মধ্যে পড়েছেন। রাজধানীর সড়কে যাতায়াতের একমাত্র বাহন এখন রিকশা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রিকশাচালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যাত্রীদের অভিযোগ— এবারের লকডাউনে সড়কে অন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন রিকশাচালকরা। একশ টাকার ভাড়া তিন-চারশ টাকা হাঁকা হচ্ছে। তবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে কি-না, মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ রাস্তায় চলাচল করছে কি-না তা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে যানবাহন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ঈদের ছুটি শেষে রোববার ব্যাংক, বিমা ও শেয়ারবাজারের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা গত তিনদিনের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে পান খাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। বিষয়টি চোখে পড়ে পাশেই থাকা র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট ডাকেন ওই ব্যক্তিকে। তাৎক্ষণিকভাবে হাত থেকে পান ফেলে দেন ওই লোক। হাসপাতালের সামনে ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশে দাঁড়িয়ে মাস্ক খুলে এভাবে সিগারেট পানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাসপাতালে ভেতরে খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই তাই বাইরে খেয়ে উপরে উঠবেন। এ জন্য তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। পুলিশের উপ-কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘যারা অতি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন, তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঠুনকো অজুহাতে যারা বের হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ চললেও এভাবেই প্রতিদিন অপ্রয়োজনে ঘর বের হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে মানুষ। জেল-জরিমানা করা হলেও কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘সবার আগে নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের বুঝতে হবে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ