আমাদের দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা না থাকায় বর্জ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে । নদীর তলদেশে পলিথিন বর্জ্যের কারণে পাহাড়ী কন্যা কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং প্রকল্প ভেস্তে গেছে । চাকতাই খাল ভরাটের ফলে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা জলে ভেসে গেছে । অথচ সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ সংকট নিরসন সম্ভব নয় । উন্নত বিশ্বে বর্জ্য একটি সম্পদ । রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে তার থেকে জৈব সার সহ কতো মূল্যবান পণ্য উৎপাদিত হয় । মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী হিসেবে ইউরোপ, আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফরকালে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আমাকে আকৃষ্ট করেছে । আসলে জনগণকে আইনের মাধ্যমে সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে না পারলে যত প্রকল্পই হাতে নেয়া হোক না কেন তা সাফল্যের মুখ দেখবে না । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ উন্নত বিশ্বের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেখেছি প্রতিটি বাড়ীতে ৪টি গার্বেজ বক্স থাকে । এর একটি পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্যে । যা রিসাইক্লিং হয়ে নানা পণ্য উৎপাদিত হয় । আরেকটি বক্স থাকে পচনশীল বর্জ্য যেমনঃ তরিতরকারি ফলমূল ইত্যাদির খোসা,উচ্ছিষ্ট অংশ, যেগুলো দিয়ে মূল্যবান জৈব সার তৈরী হয় । আরেকটি বক্স থাকে কাঁচ, টিন জাতীয় পণ্য বর্জ্যের জন্যে । পেপার জাতীয় বর্জ্যের জন্যে একটি স্বচ্ছ ব্যাগ বা বস্তা যা আবার রিসাইকেল হয় । গাছের গুড়ি বা টুকরো নির্মাণ সামগ্রী রশি দিয়ে জালের মতো গিট দিয়ে ফেলে রাখা হয়, যা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে যায় । কোনটার সাথে কোনটা মেশানো যাবে না । মেশালে পর্যাপ্ত জরিমানা গুনতে হয় । নগর ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং । জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শহরাঞ্চলে মানবসৃষ্ট বর্জ্য তৈরি হচ্ছে এবং সেসাথে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । সমন্বিত সম্পন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনটি নীতি প্রয়োগ করা হয় । তিনটি নীতি হলো- Reduce (কমানো), Re-use (পুনব্যবহার) এবং Recycle (পুনশ্চক্রীকরণ) । কিছু অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল কারনে সমন্বিত সম্পন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই প্রবর্তনের প্রয়োজন । যেমন- ক) একটি শহর, শহরের পার্শবর্তী এলাকা সমূহের জীবাণু চক্র নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ ফাঙ্গাল, ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল জার্ম সাইকেল নিয়ন্ত্রণ । ব্যক্টেরিয়াল ব্যাধি, ক্যান্সার ইত্যাদি মরন ঘাতী রোগ বালাই প্রতিকার এবং প্রতিরোধ কে সামনে রেখে এই ব্যবস্থাপনার কর্ম পরিধি সাজানো হয় । খ) নদী দূষণ মুক্ত রেখে পুরো খাদ্য চক্রকে (সাধু পানির মাছ, অন্যান্য ইনল্যান্ড ওয়াটার এর প্রান চক্র) বিষাক্ততার হাত থেকে রক্ষা (প্রতিকার এবং প্রতিরোধ) করা । গ) ভু-গর্ভস্ত সুপেয় পানির গভীরতা কে রাষ্ট্রের এবং দরিদ্র জনসমষ্টির উত্তোলন কিংবা পিউরিফিকেশন সাধ্যের নিয়ন্ত্রনে রাখা । ঘ) উন্মুক্ত এবং প্রবাহিত জলীয় (পুকুর, খাল, বিল, নদীর) উৎসের পানিকে রিসাইকেল এবল রাখার বাধ্যবাধকতা । ঙ) কৃষি ভূমির অণুজীব চক্র কে ভেঙ্গে ফেলার হাত থেকে রক্ষা, অতি দীর্ঘ মেয়াদে জমির উর্বরতা রক্ষা । চ) আবর্জনার সমন্বিত এবং ক্লাসিফাইড ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করে জৈব সার তৈরির (এমনকি ওয়েস্ট ল্যান্ডফিল গ্যাস তৈরির ইকনোমিক প্রকল্প) প্রকল্প হাতে নিয়ে দেশে ওরগ্যানিক চাষাবাদের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা । মেগা সিটি ম্যানেজমেন্ট চালু করতে হলে দেশ ও নগরের বর্জ্য প্রথমে উৎস অনুসারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ক্লাসিফাই করে নিতে হবে । এরপর ময়লা-আবর্জনার সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার পৃথক এবং সমন্বিত মডেল সাজাতে হবে । উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একসাথে তিনটি রঙ্গের ডাস্টবিন সিস্টেমের ব্যবহার রয়েছে । আবার কোন কোন দেশে ৪টি ডাস্টবিনেরও ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে । এই ডাস্টবিন ৩টি প্রত্যেক বাড়ির সামনে সারিবদ্ধভাবে দেয়া থাকে । বাড়ির ব্যবহৃত আবর্জনাসমূহ ৩টি ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়ে থাকে বিনগুলোতে । বর্জ্য নিষ্কাশন গাড়ি রাতে এসে বর্জ্যগুলো ৩ভাগে কালেকশন করে নিয়ে যায় । আসুন জেনে নিই তিনটি বিন সিস্টেম সম্পর্কে । উন্নত বিশ্বের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তারা ৩টি রঙ্গের ডাস্টবিন ব্যবহার করেন । যেমন- ১) সবুজ ডাস্টবিন/Organics for compost (২৪০লিটার) যেখানে উদ্যান জৈব ফেলা হয় । এখানে বাগানে জন্মানোর সমস্ত জৈব বর্জ্য এই বাক্সে রাখা হয় । যেমন- ঘাস, সংবাদপত্রের কাটিয়া রাখা অংশ, আগাছা (উদ্ভিদ সহ) ডানা, লাঠি, ছাঁটাই, কাটিং এবং ফ্রুটস, গাছ বাদাম ইত্যাদি ।এই বিনের বিষয়বস্তুগুলি হেন্ডারসন বর্জ্য রিকভারি পার্ক/জায়গাতে মিশ্রিত করার জন্য প্রেরণ করা হয় । ২) হলুদ ডাস্টবিন/Recycling (২৪০লিটার) এখানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ফেলা হয় ।এই বিনের বিষয়বস্তুগুলিকে পুনরুদ্ধারের সুবিধায় সুয়েজপেন্সে প্রেরণ করা হয় যেখানে সেগুলি আলাদা করা হয় এবং পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রেরণ করা হয় । সমস্ত শক্ত প্লাস্টিকের টব, বোতল, প্লাস্টিকের পাত্র, সমস্ত গ্লাস বোতল, জার, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ক্যান, এলইডি লাইট, পিচবোর্ড, কাগজ, খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, ফয়েল পেপার, ব্যাটারি, মোবাইল ফোন, প্রিন্টার কার্তুজ এবং হালকা বাল্বগুলি, স্প্রে পেইন্ট, রাসায়নিক, গ্যাসের বোতল, অ্যারোসোল ক্যান এবং অন্যান্য বিপজ্জনক গৃহস্থালী বর্জ্য অপচনশীল বর্জ্য ইত্যাদি ফেলা হয়, যা পুনর্ব্যবহারের জন্য পুনরুদ্ধার পার্কে প্রেরণ করা হয় ।আপনি আপনার হলুদ-লিডযুক্ত রিসাইক্লিং বিনটিতে নিম্নলিখিত আইটেমগুলি নিষ্পত্তি করতে পারেন: ৩) লাল ডাস্টবিন/Rubbish (১৪০লিটার) সাধারণ বর্জ্য ফেলা হয় ।অ-পুনর্ব্যবহারযোগ্য সাধারণ খাদ্যের বর্জ্য, স্ক্র্যাপ খাবারের সাথে দূষিত পদার্থ, যেমন কাগজের তোয়ালে, সার্ভিট, টিস্যু, কাগজ প্লেট, পিজ্জা বাক্স, চিপস পেপার, পেপার প্লেট, ডাইপার, ব্যান্ড-এইড, মৃত্তিকা আইটেম, কাগজ কাটা/কুচি, স্যানিটারি আইটেম, সুতি উলের এবং সুতির উলের কুঁড়িচুল, সফট প্লাস্টিক, পুরনো পোষাক ইত্যাদি । এই বিনের সামগ্রীগুলি বর্জ্য পুনরুদ্ধার পার্কে/জায়গা প্রেরণ করা হয় । উন্নত রাষ্ট্রের জন্য বর্জ্যের উৎস বিচ্ছেদ অত্যন্ত গুরত্বপুর্ণ একটি বিষয় । হলুদ ও লাল ডাস্টবিন বর্জ্যের উৎস বিচ্ছেদ করে এবং বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করে এটি রাষ্ট্রের জন্য ব্যয় হ্রাস এবং পুনর্ব্যবহারের হার বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর পরিচালনা । সবুজ ডাস্টবিনটির জৈবিক উপাদানগুলি পূর্বে সাধারণ বর্জ্য বাক্সের সাথে অন্যান্য সাধারণ গৃহস্থালী বর্জ্যের সাথে স্থাপন করা হয় এবং আঞ্চলিক রিসোর্স পুনরুদ্ধার কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়, সেখানে সেগুলি নিম্ন মানের মানের কম্পোস্টে প্রক্রিয়া করা হয় । এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্পাদিত গাছের শিকড়ের চারিধারে রক্ষিত ভেজা খড়-পাতা ইত্যাদি উচ্চমানের কম্পোস্ট তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং সাথে পচনশীল বর্জ্যের ব্যাকটেরিয়া ও দূষণের মাত্রা হ্রাস করে । বাংলাদেশের পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইনি কাঠামো গড়ে উঠেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের উপর ভিত্তি করে । এছাড়াও জাতীয় সংসদে প্রণীত আইন, নিয়মাবলী, উপ-আইন ও বিভিন্ন বিধিমালা নিয়ে এ ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়ে থাকে । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (১) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন । এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০১১ সালের ৩০ জুন পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৮ (ক) ধারা যোগ করা হয় ।নতুন এই ধারায় বলা হয়েছে যে, “রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন । বাংলাদেশে পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সর্ম্পকিত যে সকল পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও আদেশ রয়েছে সেগুলো হলো- (১) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫, (২) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত), ২০০০, (৩) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত), ২০০২, (৪) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত), ২০১০, (৫) পরিবেশ আদালত আইন, ২০০০, (৬) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭, (৭) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা (সংশোধিত ফেব্রুয়ারি), ১৯৯৭, (৮) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা (সংশোধিত আগস্ট), ১৯৯৭, (৯) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ (সংশোধিত ২০০৫), (১০) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ (সংশোধিত ২০১০) ।বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যেসকল বিধিমালা ও আদেশ রয়েছে সেগুলো হলো- (১) চিকিৎসা-বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮, (২) বিপদজনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙ্গার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১১, (৩) ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য হইতে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৭ (খসড়া) । বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫’ অনুযায়ী ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’র খসড়া তৈরি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর । জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করা বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় একটি বিধান রাখা হয়েছে । বিধানে বলা হয়েছে, যদি কেউ জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদেরকে সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা জরিমানা করা হবে এবং একই কাজ পুনরায় করলে সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকা জরিমানা করা হবে । বর্জ্যকে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করতে নতুন নীতিমালা বিশেষভাবে সহায়তা করবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে । উন্নত দেশগুলোতে যেমন সুইডেন ও নরওয়েতে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারযোগ্য লাভজনক ভিন্ন বস্তুতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে । এজন্য তারা অন্য দেশ থেকেও বর্জ্য আমদানিও করছে । বাংলাদেশেরও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত । বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে বর্জ্য সংরক্ষণ, নিরপেক্ষায়ণ, নিষ্ক্রীয়করণ অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন নতুন জিনিস বানানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ।এতে পরিবেশের সাথে সাথে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ ও দেশের মানুষ । উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মত মেগাসিটি করতে হলে সকল স্তরে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে । ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার । তাই ছোটবেলা থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে । এখানে সরকার ময়লা ব্যবস্থাপনার ‚ওয়েস্ট রি-ইউজ” ‚ওয়েস্ট রি-সাইকেল” এবং ‚ওয়েস্ট রিডিউস” কন্সেপ্ট জনগণকে বুঝাবে, এই শিক্ষা প্রাইমারি স্কুলে দেয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার । ময়লা ব্যবস্থাপনার জ্ঞান বাচ্চাদের মাঝে নিয়ে আসতে হবে, পারিবারিক এবং প্রাইমারি শিক্ষার স্তরেই! এ শিক্ষা দিতে হবে পরিবার থেকেই । পরিবার থেকে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলার শিক্ষা ছাত্র-ছাত্রীদের ছোটবেলা থেকেই সচেতন হতে সাহায্য করবে । তাছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ব-বিদ্যালয় পাঠ্যপুস্তকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নির্দিষ্ট অধ্যায় সংযুক্ত করলে এবং গণমাধ্যমে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনামূলক অনুষ্ঠান প্রচারসহ কার্যকর বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে শিশুসহ আমাদের সকলকে সচেতন করে তুলতে হবে । নগরের দূষণ, অপরিচ্ছন্নতা এবং জলাবদ্ধ মানুষেরই তৈরি । তাই ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এর কারিগরি বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া খুব দরকার । ময়লার ক্ল্যাসিফিকেশন এবং “রি-ইউজ,” ‚রি-সাইকেল,” ‚রিডিউস,” কন্সেপ্ট নাগরিকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াঃ পচনশীল, অপচনশীল ক্ল্যাসিফাইড ময়লা সম্পর্কে সিটি ম্যানেজমেন্ট নাগরিককে সচেতন করতে টিভি প্রমোশনে যেতে হবে ।প্যাকেজিং সহ পলিব্যাগের দাম আতিমাত্রায় বৃদ্ধির যত সম্ভব পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে । পাশাপাশি কাগজের প্যাকেট ও পাটের ব্যাগ তো ভারি পণ্যের মড়ক হিসেবে বাধ্যতামূলক করতেই হবে । পচনশীল এবং অপচনশীল উভয় পদ্ধতির সুবিধা রেখে বাজার গুলোর ময়লা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে । পশু জবাইকে বাসা বাড়ি থেকে সরিয়ে বাজার ভিত্তিক কিংবা আংশিক ভাবে খামার ভিত্তিক করা যায় কিনা সেটা নিয়ে নেয়া পরিকল্পনা ম্যাচিউর করতে হবে ।তবে পশু জবাই স্কুল মাঠ কেন্দ্রিক করা যাবে না কোনভাবেই, এতে জীবাণু সংক্রমণে বাচ্চাদের স্বাস্থ্য গত ঝুঁকি দেখা দিতে পারে ।আর এভাবেই নিরাপদ, সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করে যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলার চর্চা বন্ধ হবে ব্যক্তি থেকে বৃহত্তর পর্যায়ে । আসুন জীবন গড়ি, পরিবেশবান্ধব দেশ গড়ি ।
লেখকঃ আইনজীবী, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী।